Header Ads

Header ADS

তথাকথিত আধুনিকীকরণের নিমিত্তে অ-ইসলামিক চর্চা।


তথাকথিত আধুনিকীকরণের নিমিত্তে -ইসলামিক চর্চা।
লেখক:  Syed Al Jawad Sayem

সকাল দশটা।
তামান্না ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে, মেকআপ টেবিলের সামনে বসে গেল। পাশের রুম থেকে, "এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠলি, কিছু না খেয়েই বসে পড়লি সাজতে। কি কোথাও বের হবি নাকি?"
"না মা, এক্ষুনি খেতে আসছি"
অগত্যা দশ মিনিট পর সেলফোনে ক্লিক ক্লিক করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড। ক্যাপশন "Good morning friends.How is looking my new hairstyle" অতঃপর চোখকে স্ক্রিনের অনুগত রেখেই খাওয়ার পর্ব শুরু করলো মিথিলা আর ফাঁকে ফাঁকে লাইক গণনা আর কমেন্টের রিপ্লাই দিতে দিতে খুব ব্যস্ত সময় ব্যয় হচ্ছে তার। ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও একটু নিরীক্ষণ করলেই দেখা মিলবে এই সাধারণ ঘটনাটির অনুরূপ বাস্তব ঘটনা গুলোর পুনরাবৃত্তি। এই সাধারন বিষয়টি এখন একটি ট্রেন্ড রূপ নিয়েছে। কিভাবে? খুব সহজ মিথিলার লাইফ স্টাইল দেখে ওর মতো আরো অনেক জন তাকে অনুকরণ করতে চাইবে ঠিক যেমনটা হয়তো মিথিলা অন্য কাউকে অনুকরণ করে এসেছে। আর এই প্রথাটি চেইন রিয়েকশন এর মতো ছড়িয়ে পড়ছে একজন থেকে আরেক জনের মনে।
আজকালকার যুবসমাজের মধ্যে নিজেকে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করে তোলার এক ধরনের প্রতিযোগীতা কিংবা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। দেখতে যে যত বেশি আকর্ষণীয়, যত বেশি এক্সপোজড (বেপর্দা) সমানুপাতিক হারে সে ততবেশি আধুনিক। কি ছেলে বা কি মেয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাটে নিজেকে তথাকথিত আধুনিকতার চাদরে মুড়িয়ে নেওয়ার অন্ধ প্রতিযোগীতা। শুধু এখানেই তারা ক্ষান্ত নয় নিজের সৌন্দর্য, আচার-আচরণের প্রতিলিপি এবং লাইফ স্টাইল সবকিছুই ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যাতে করে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারে স্বগৌরবে। এই যেন আধুনিকতার মুকুট জয় করার তীব্র মনোকামনা। আর বোনাস স্বরূপ লাইক, শেয়ার, রিয়েক্ট, কমেন্ট তো আছেই। ব্যক্তিগত নামক সত্তা টি বিক্রি করা হয় ফেসবুক আর ইউটিউব পাড়ায়। আর জীবনটা যেন ওই চারকোনা স্কিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্ট্যাটাস, কমেন্ট, লাইক পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হতে থাকে এই জীবন চক্রটি ওই চার বাহুর ভেতরেই।
এবার একটু শিরোনামের দিকে নজর দেওয়া যাক, অতিমাত্রিক হারে নিজেকে আধুনিকীকরণের প্রবণতা আমাদের যুব সমাজকে কোন অজানা সীমানায় ডুবিয়ে দিচ্ছে তা বুঝার জন্য খুব বেশি ইসলামিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই মৌলিক কিছু জ্ঞান দিয়ে আমরা বুঝতে পারবো, তথাকথিত আধুনিকতা, আমাদের ইসলাম থেকে কত দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলছে। আত্ম আধুনিকায়নের প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার জন্য যেসব হাতিয়ারের সাহায্য নিতে হয় ওইসব কর্মযজ্ঞ কি ইসলাম সমর্থন করে? কয়েকটি উদাহরণ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করি।
উদাহরণ খোঁজার জন্য বেশি দূরে কোথাও যেতে হবে না, এই ধরুন ঘর থেকে বের হলেই দেখা মিলবে ওইসব ছেলেমেয়েদের যারা কিনা নিজেদের বেশভূষা ইন্টারচেঞ্জ করেছে। শার্ট , টাখনুর উপর জিন্স প্যান্ট পরিহিত মেয়ে আর হাতের , কানে  ধাতব অলংকার পরিহিত লম্বা চুলের ছেলেদের দেখা মিলবে হরহামেশাই। আধুনিকতার মাপকাঠির শীর্ষে তাদের অবস্থান। এইসব গর্হিত কাজ ইসলামে কি সমর্থনযোগ্য ? মোটেও না, ইসলামিক রীতিতে এইসব কার্যকলাপকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এইসব কাজ কে শেষ জামানার খারাপ আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার আসি অন্য দিকে, সমাজে বোরকা পরিহিত মেয়ে কিংবা টাখনুর উপরে প্যান্ট পরা গুটি কয়েক যারা আছেন তাদের সম্মুখীন হতে হয় নানা রকম ঠাট্টা বিদ্রূপের। বন্ধু সমাজ তাদের "ক্ষেত" বলে অবমূল্যায়ন করে থাকে। অজ্ঞতার মোহে আমরা ভুলে যাই যে, দিন শেষে আমরাও একজন মুসলিম।
বর্তমানে আরেকটি চর্চা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেটি হচ্ছে নিজের শোয়ার ঘরের ছবি থেকে শুরু করে কখন , কোথায়, কোন মুহূর্তে কি করছি সবকিছুই আমরা আপডেট করতে থাকি ফেসবুক , টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যম গুলোতে শুধুমাত্র ফেসবুকে নিজের কর্মকাণ্ডকে সবার সামনে পরিবেশন করার জন্য অতিরঞ্জিত করে পোস্ট করে থাকি। মনের ভেতর নিষিদ্ধ তৃপ্তি লাভের আশায় থাকি, আমাকে নিয়ে আলোচনা করবে সবাই আর আমার সৌন্দর্যে বিমোহিত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। পার্সোনাল জিনিস বলতে যে কি কিছু আছে ওইটা আমরা হারাতে বসেছি। ভাইরাল হওয়ার জন্য যত নিচে নামা যায় তত নিচে নামতে কোণঠাসা হইনা আমরা। মনের ভেতর শুধু একটি বাসনা "ভাইরাল হতে হবে আমাকে।" সে যেভাবেই হোক নেচে-গেয়ে, তামাশা করে যেকোনো পন্থায়। এই কিছুদিন আগেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে দেখা গেছে একটি মেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান করছে আর তার ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝিলপাড় বস্তির আগুন। লজ্জার থলিতে পানি ঢেলে তা দিয়ে গোসল করে নিয়েছি অনেক আগেই, ইসলাম মানার সময় কই? এই নিয়ে বলতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে  না।
সব কথার এক কথা হলো, এই আধুনিকতার ধারা ইসলামী জীবনধারার ব্যস্তানুপাতিক। যতই আমরা এই আধুনিকতাকে কাছে টেনে ধরবো ততই দূরে সরে যাবে ইসলাম। প্রাশ্চাত্যের চালচলনের প্রবাহ এতই বহমান যে আমাদের সমাজ পুরোপুরি কলুষিত হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। আর পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এর থেকে বেরিয়ে আসা এক কথায় অসম্ভব। এই চলমান ধারার উপসংহারে এসে দেখা যাবে, সমাজে নামধারী মুসলিমের অভাব নেই, শুধু দেখা মিলবে না প্রকৃত মুসলিমদের , যারা কিনা সমাজের করাল গ্রাস থেকে আত্মগোপন করে ফেলবেন।

No comments

Powered by Blogger.