Header Ads

Header ADS

খোলাফায়ে রাশেদিন ও বর্তমান মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ পদ্ধতির মধ্যকার সামঞ্জস্যতার সংক্ষিপ্ত ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ, দ্বিতীয় পর্ব

খোলাফায়ে রাশেদিন ও বর্তমান মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ পদ্ধতির মধ্যকার সামঞ্জস্যতার সংক্ষিপ্ত ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ, দ্বিতীয় পর্ব 

লিখেছেন: এন হাসবি


হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা) যখন জীবনের শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়ে পরবর্তী খলীফা নিয়োগের চিন্তায় অধীর হয়ে পড়েন, তখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে হযরত উমর (রা)কে এই পদে অভিষিক্ত করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁহার জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিঃসন্দেহে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার অন্তর্ধানের পর উমর ফারুক (রা)- হচ্ছেন খিলাফতের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (রা)-এর নিকট যখন তার এই মত প্রকাশ করলেন, তখন তিনি বললেনঃউমর ফারুক সম্পর্কে আপনার যে মত, আল্লাহ্ শপথ তিনি তা হতেও উত্তম। কিন্তু চিন্তার বিষয় এই যে, তার প্রকৃতিতে তীব্রতা কঠোরতা অত্যন্ত বেশী এর উত্তরে হযরত আবূ বকর (রা) বললেনঃতার কারণ এই যে, আমার মধ্যে ছিল অত্যধিক নম্রতা বিনয়। কিন্তু তার নিজের উপরই যখন দায়িত্ব অর্পিত হবে, তখন তিনি তার অনেক অভ্যাস স্বভাবই পরিত্যাগ করবেন। হে আবূ মুহাম্মাদ! আমার অভিজ্ঞতা এই যে, আমি কারো প্রতি ক্রুদ্ধ হলে আমার ক্রোধাগ্নি নির্বাপিত করার জন্য উমরই চেষ্টিত হতেন আমাকে নম্র ভাব অবলম্বনের পরামর্শ দিতেন (আল-ইসলাম অল-হিযারাতুল আরাবিয়া)


হযরত উমর ফারুক (রা)-এর কঠোর প্রকৃতি সম্পর্কে হযরত আবূ বকর (রা)-কে জনগণের নিকটও জওয়াবদিহি করতে হয়েছে। তার পরবর্তী খলীফা সম্পর্কে তার মত যখন জনগণের মধ্যে প্রচারিত হয়ে পড়ে, তখন কিছু সংখ্যক লোক এসে তাকে জিজ্ঞাসা করেঃউমরের মত কঠোর প্রকৃতির ব্যক্তিকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করলে আল্লাহ্ নিকট আপনি কি জবাব দিবেন?” হযরত আবূ বকর (রা) তাদের ভুল মতের অত্যন্ত সূক্ষ্ম পন্থায় প্রতিবাদ করে বললেনঃআমি আল্লাহ্ সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলব যে, পরবর্তী উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম ব্যক্তিকেই আমি খলীফা হিসাবে পছন্দ করেছি।বস্তুতঃনবী করীম ()-এর দরবারে হযরত আবূ বকর (রা)-এর যে মর্যাদা ছিল, হযরত আবূ বকর (রা)-এর দরবারে অনুরূপ মর্যাদা ছিল হযরত উমর ফারুক (রা)-এর।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর পর হযরত উমর ফারুক (রা) দীর্ঘ দশটি বৎসর পর্যন্ত ইসলামী খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অজ্ঞাতনামা আততায়ীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে পড়লে জীবনের সায়াহ্নকালে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্য-বিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করিয়া দেন। হযরত আলী, হযরত উসমান, হযরত জুবাইর, হযরত তালহা, হযরত সায়াদ, হযরত সায়াদ ইবনে আক্কাস এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) এই বোর্ডের সম্মানিত সদস্য ছিলেন। তিন দিনের মধ্যেই খলীফা নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করার জন্যও এই বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হযরত উমর ফারুক (রা)-এর কাফন-দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া হয়। দুইদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা, মত বিনিময়, জনমত যাচাই ইত্যাদি কাজে অতিবাহিত হয়ে যায়। তৃতীয় দিনে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা)-এর প্রস্তাবক্রমে ওই বোর্ড থেকে হযরত উসমান (রা)-কে খলীফা নির্বাচন করা হয়। সমবেত সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে হযরত আলী (রা) সর্বপ্রথম তাঁহার হাতেবায়আতকরেন। অতঃপর উপস্থিত জনতা বায়আতের জন্য ভেঙে পড়ে। এইভাবে ২৪ হিজরী সনের মুহাররম মাসের তারিখ সর্বসম্মতিক্রমে হযরত উসমান (রা) খলীফা পদে বরিত হন এবং খিলাফতে রাশেদার শাসনভার গ্রহণ করে।
হযরত উসমান (রা)-এর শাহাদাত বরণের পর তিনদিন পর্যন্ত খিলাফতের আসন শূন্য থাকে। এই সময় পরবর্তী খলীফার জন্য হযরত আলী (রা)-এর প্রতি জনগণের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। বহু লোক তাকে এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায়। প্রথম দিকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় অসম্মতি জানানো সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মুহাজির আনসার সাহাবীগণের পৌনঃপুনিক অনুরোধে এই দায়িত্ব গ্রহন করতে তিনি সম্মত হন।খেলাফতের দাবি নিয়ে উপস্থিত জনতা আলী রাঃ কে উদ্দেশ্য করে বলেন আমরা আপনার হাতে আনুগত্যের বায়আত করব, আপনি হাত প্রসারিত করে দিন। কেননা এখন আমাদের একজন আমীর-রাষ্ট্রনায়ক-নিযুক্ত করা একান্তই অপরিহার্য। আর এই পদের জন্য আপনি অধিকতর যোগ্য অধিকারী।

হযরত আলী (রা) প্রতি উত্তরে বললেনঃ এই ব্যাপারে কিছু বলার বা করার তোমাদের কোন অধিকার নাই। ইহাতো পরামর্শদানের যোগ্যতাসম্পন্ন বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী প্রাথমিক পর্যায়ের মুসলমানদের সম্মিলতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপার। তারা যাকে খলীফারূপে গ্রহণ করিবেন, তিনিই খলীফা হবেন। অতএব চল, আমরা সকলে একত্রিত হই এবং বিষয়টি সম্পর্কে বিচার-বিবেচনা করি।এই কথা শুনিয়া লোকেরা তার নিকট হইতে চলে গেল। কিন্তু কিছুক্ষন পর তারক পুনরায় তার নিকট এসে বায়আত করার জন্য চাপ দিতে থাকে। তখন হযরত আলী (রা) বললেনঃ"তোমরা যদি এটাই চাও যে, ‘আমি খলীফা হই তোমাদের নিকট হতে আনুগত্যের বায়আত গ্রহণ করি, তাহলে মসজিদে নববীতে চল,সেখানেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হবে।নিশ্চিন্ত কথা, আমাকে খলীফা নির্বাচন করা সেজন্য আনুগত্যের বায়আত করা গোপনে অনুষ্ঠিত হতে পারে না। ইহা অবশ্যই মুসলিম জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সন্তোষ অনুমোদনের ভিত্তিতেই হতে পারে।অতঃপর মসজিদে নববীতে সমবেত সর্বসাধারণ মুসলমানদের প্রস্তাবনা এবং স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আনুমোদনের পর হযরত আলী (রা)-কেই পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত করা হয় এবং ২১ শে যিলহজ্জ সোমবার দিন মসজিদে নববীতে বিপুল ইসলামী জনতার উপস্থিতিতে তারই হাতে খিলাফতের সাধারণ বায়আত গ্রহণ করা হয়। তিনি বরিত হন খিলাফতে রাশেদার চতুর্থ খলীফা হিসাবে।

বর্তমান বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ খোলাফায়ে রাশেদার আলোকে অত্যন্ত মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ।অধিকাংশ রাষ্ট্রে সরাসরি জনগনের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান নির্ধারিত হয়।যেটা তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাঃ এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।কিন্তু বর্তমান এই ভোট প্রদান বা মতামত প্রদানের পদ্ধতিটি মারাত্মক ত্রুটিযুক্ত।নির্বাচনের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখে।জনগণ যোগ্য ন্যায়পরায়ন ধার্মিক ব্যক্তিদের বাচাই করলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে তারা হয় নির্বাচিত হতে পারেনা অথবা নির্বাচিত হয়েও ষড়যন্ত্রের কারণে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনা।আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও সংঘবদ্ধ দুষ্টচক্রের কারণে ক্ষমতায় টিকতে পারেনা।আর কিছু কিছু রাষ্ট্রে শরিয়ত বিরোধীভাবে অর্থ অস্ত্রবলে কিছু পরিবার যুগ যুগ ধরে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া জনগণকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, নিপীড়ন করে,জনমতকে তোয়াক্কা না করে এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে।এক্ষেত্রে তারা অমুসলিম পপরাশক্তিগুলোর সহযোগিতা পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়ে থাকে।তারা নিজেদের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার,দূর্নীতি,অবৈধ ভোগবিলাস,অপকর্ম ইত্যাদি ঢাকতে তাদের পরিবারের বাইরের কাউকে ক্ষমতার বলয়ে ঘেষতে দেয়না।যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান মুসলিম বিশ্বে অধিকাংশই খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাদের আদর্শ ধারণ করেনা।অতএব এরা কোনভাবেই ক্ষমতার দাবীদার হতে পারেনা।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতিকে খোলাফায়ে রাশেদার মতো সৎ,ন্যায়পরায়ণ ধার্মিক রাষ্ট্রপ্রধান দান করে সঠিক পথে পরিচালিত করুক।এবং আমাদেরকে খোলাফায়ে রাশেদার মতো স্বর্নযুগের সারথি হিসেবে কবুল করুক|

No comments

Powered by Blogger.