করোনা কালে, ভ্যাকসিন সমাচার, সমাচার পর্ব ১...
করোনা কালে, ভ্যাকসিন সমাচার.
সমাচার পর্ব
১...
নিউজফিড
খুললেই করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর খবর চোখে
পড়ে হরহামেশা। এক দেশের বিজ্ঞানীর
প্রতিষেধক আবিষ্কার করলো আবার ওই দেশের গবেষকরা
"হিউম্যান ট্রায়াল" শুরু করলো , কিন্তু দিনশেষে করোনার কোনো কূল-কিনারা করতে পারলো না কেউ। তবে
এত্তো এত্তো খবর গুলো দেখে এটাই বিষয় আঁচ করা যায় , গবেষকরা কোমর বেঁধে নেমেছে করোনার লাগাম টানার জন্য। সুতরাং বলা যায় অদূর ভবিষ্যতে আশার আলো ঠিকই উঁকি দিবে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের মুখে এখন ভ্যাকসিন নামক একটি শব্দের খুব খই ফুটছে। লোকজন
বুঝে না বুঝে পোস্ট
শেয়ার করছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বুঝি ভ্যাকসিন
আবিষ্কার হয়ে গেল এই আশা নিয়ে।
ধারাবাহিক এই লেখাটিতে আমি
আলোচনা করার চেষ্টা করব করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে। আমার আলোচনার উদ্দেশ্য খুব সাধারন মানুষের কাছে ভ্যাকসিন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পৌঁছানো। আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের আগে বুঝতে হবে ভ্যাকসিন বিষয়টা কি। আমি বিষয়টিকে সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব যাতে সব শ্রেণীর মানুষই
এর সাধারণ কার্যপ্রণালী টা বুঝতে পারে।
এটা বুঝার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হতে হবে অথবা আহামরি জ্ঞান থাকার দরকার নেই। চলুন তাহলে,
একটি
গ্রামের কথা কল্পনা করুন যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক চোর এসে লুটপাট করে চলে যায়। এর থেকে পরিত্রান
পাওয়ার জন্য গ্রামবাসী কিছু পোষা কুকুর কিনে আনল চোর ঠেকাবে বলে। চোরেরাও কম যায় না
কুকুর টের পাওয়ার আগেই তারা আবার গ্রামে ঢুকে লুট করে চলে যায়। রাস্তায় চোরদের ফেলে যাওয়া কিছু কাপড়ের টুকরো পেয়ে গ্রামবাসীরা একটা বুদ্ধি আটল, তারা চোরদের পরনের কাপড় গুলো সংগ্রহ করে কুকুরের নাকে শুকালো যাতে পরবর্তীতে চোর গ্রামে ঢুকা মাত্রই কুকুর গন্ধ শুঁকে আগে থেকে টের পেতে পারে পারে। বলা বাহুল্য কুকুরের ঘ্রাণশক্তি কিন্তু খুবই খুবই প্রখর। এরপরে যা ঘটার তাই
ঘটলো , চোরের দশ দিন আর
মালিকের একদিন। সত্যি সত্যিই বুদ্ধিটা কাজে দিল গ্রামের রাস্তায় চোরেরা ঢুকতেই কুকুরগুলো তাদের শরীরের ঘ্রাণএর আঁচ পেয়ে তাদের তাড়া দিয়ে ধরে ফেললো। অতএব এইখানে আমরা পুরো ঘটনা যদি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব চোরদের ব্যবহারকৃত জিনিস এর সাহায্যে কুকুরকে
চোর সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া হয়েছিল। ওই ধারণার উপর
ভিত্তি করে পরবর্তীতে কুকুরগুলো চোর ধরতে সমর্থন হয়।
ঠিক
ভ্যাকসিন বিষয়টা অনেকটা কুকুরের ঘ্রাণ নিয়ে চোর ধরার মতোই। আসুন এবার ভ্যাকসিনের সাথে ঘটনাটি মিলাই। এইখানে গ্রামটি হচ্ছে আমাদের শরীর, কুকুরগুলো হচ্ছে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী বিভিন্ন কোষসমূহ (বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের white blood cell), চোরগুলো ভাইরাস আর ওই যে
কাপড়, ওটাই হচ্ছে ভ্যাকসিন। আসুন আরেকটু পরিষ্কার হয় বিষয়টা, ভ্যাকসিন হচ্ছে ভাইরাসেরই এমন কিছু অংশ যা আমাদের শরীরকে
ওই সংশ্লিষ্ট ভাইরাসকে চিনতে সাহায্য করে। ঠিক চোরের কাপড় যেমন চোরকে চিনতে সাহায্য করেছিল। চোরের কাপড় যেমন গ্রামের কোন ক্ষতি করছে না কেবলই একটি
নিষ্ক্রিয় বস্তু তদ্রূপ ভ্যাকসিন হল ভাইরাসের শরীরের
এমন কিছু অংশ যেটা প্রয়োগ করলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না বরং শরীর
ওই নির্দিষ্ট অংশটির সাহায্যে নির্দিষ্ট ভাইরাসকে পূর্ব থেকেই চিনে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। যাতে ভবিষ্যতে কখনো সংলিষ্ট ভাইরাসের আক্রমণ ঘাটলে শরীর যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে , ভাইরাসকে সমূলে প্রতিহত করার জন্য। ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতির অনেক রকম প্রকারভেদ আছে। উপরে যেই উদাহরণটি টেনেছি ওইটা অন্যতম একটি প্রকার যার নাম সাব ইউনিট ভ্যাকসিন। এই পদ্ধতিতে ভাইরাস
থেকে এমন কিছু প্রোটিন আলাদা করে আইসোলেট করা হয় যেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু ওই অংশটি ভাইরাস
recognition-এ ভূমিকা রাখবে আর ভাইরাসের এই
উপাংশ কে বলা হয়
এন্টিজেন অথবা সম্পূর্ণ ভাইরাসকেও এন্টিজেন বলা হয়।
আর ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা কিছু প্রতিরোধকারীকোষ যেমন বিভিন্ন ম্যাক্রোফেজ কোষ (B cell, T cell, helper cell) ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে এমন কিছু প্রতিরোধী রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে, যেগুলোকে আমরা অ্যান্টিবডি বলে থাকি। কুকুর যেমন কাপড়ের ঘ্রাণ দিয়ে চোরের স্মৃতি মনে রেখে পরের দিন চোর ধরতে সমর্থ হয় ঠিক আমাদের শরীরে মেমোরি সেল নামের কিছু কোষ থাকে যারা ওই নির্দিষ্ট এন্টিজেন কে চিনে রাখার মাধ্যমে একটা স্মৃতি তৈরি করে রাখে যেন ভবিষ্যতে কখনো সংশ্লিষ্ট ভাইরাস যদি শরীরে প্রবেশ করে যেন ওদের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করার মাধ্যমে শরীর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
![]() |
| antibody-antigen interaction |
আর ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা কিছু প্রতিরোধকারীকোষ যেমন বিভিন্ন ম্যাক্রোফেজ কোষ (B cell, T cell, helper cell) ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে এমন কিছু প্রতিরোধী রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে, যেগুলোকে আমরা অ্যান্টিবডি বলে থাকি। কুকুর যেমন কাপড়ের ঘ্রাণ দিয়ে চোরের স্মৃতি মনে রেখে পরের দিন চোর ধরতে সমর্থ হয় ঠিক আমাদের শরীরে মেমোরি সেল নামের কিছু কোষ থাকে যারা ওই নির্দিষ্ট এন্টিজেন কে চিনে রাখার মাধ্যমে একটা স্মৃতি তৈরি করে রাখে যেন ভবিষ্যতে কখনো সংশ্লিষ্ট ভাইরাস যদি শরীরে প্রবেশ করে যেন ওদের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করার মাধ্যমে শরীর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
নিচে চিত্রের প্রথম ধাপে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ভাইরাসের ছবি দেখছি এরপর দ্বিতীয় ধাপে দেখছি ভাইরাস থেকে ছোট ছোট "T" সদৃশ কাটার মত কিছু অংশ আলাদা করে নেওয়া হয়েছে (যা মূলত ভাইরাস এর প্রোটিন)। এই কাজ অত্যাধুনিক যন্ত্র এর সহা়তায় Recombinant method এ সম্পাদন করা হয়। পরবর্তী তৃতীয় ধাপে ওই ছোট অংশগুলো দিয়ে ল্যাবরেটরীতে একটি ভ্যাকসিন এর দ্রবণ তৈরি করা হয়েছে সাথে আরো অনেক রকমের জটিল রাসায়নিক মিশিয়ে। এর পর বিভিন্ন ধাপের এনিমল ট্রায়াল, হিউম্যান ট্রায়াল, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাস করার পর, ভ্যাকসিন ফরমুলাটি মানব শরীরে প্রবেশ করানোর জন্য প্রস্তুত হয় । সর্বশেষ এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে একজন সাধারন মানুষ নিজের শরীরে আগাম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে। এটাই মূলত সাব ইউনিট ভ্যাকসিনের বেসিক মেকানিজম। উল্লেখ্য এখানে ভ্যাকসিন এর প্রকারভেদে সাব ইউনিট বলার অর্থ হলো,ভাইরাসের নিজের শরীরেরই কিছু অংশ যেহেতু এখানে ব্যবহার করা হয় বলে, এটাকে সাব ইউনিট অথবা সোজা বাংলায় বললে ভাইরাসের উপাংশ বলে যেতে পারে। এটা ছাড়াও আরো কয়েক প্রকারের ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে যেমন লাইভ অ্যাটিনিউটেড ভ্যাকসিন , আরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ ভ্যাকসিন, ইন্যাক্টিভ ভ্যাকসিন ইত্যাদি আমরা পরবর্তী পর্বে অন্যান্য পদ্ধতি সম্পর্কে সহজ ভাবে ধারাবাহিক আলোচনা করবো।
![]() |
| Vaccination Process |
উল্লেখ্য এখানে ভ্যাকসিন এর প্রকারভেদে সাব
ইউনিট বলার অর্থ হলো,ভাইরাসের নিজের শরীরেরই কিছু অংশ যেহেতু এখানে ব্যবহার করা হয় বলে, এটাকে সাব ইউনিট অথবা সোজা বাংলায় বললে ভাইরাসের উপাংশ বলে যেতে পারে। এটা ছাড়াও আরো কয়েক প্রকারের ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে যেমন লাইভ অ্যাটিনিউটেড ভ্যাকসিন , আরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ ভ্যাকসিন, ইন্যাক্টিভ ভ্যাকসিন ইত্যাদি আমরা পরবর্তী পর্বে অন্যান্য পদ্ধতি সম্পর্কে সহজ ভাবে ধারাবাহিক আলোচনা করবো।
চলবে...



No comments