Header Ads

Header ADS

করোনা কালে, ভ্যাকসিন সমাচার. সমাচার পর্ব ২ ...


করোনা কালে, ভ্যাকসিন সমাচার. সমাচার পর্ব  ...



 ভ্যাক্সিনেশন পদ্ধতি হলো মূলত শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষিত করে রাখা অথবা পূর্ব প্রস্তুতি মূলক ব্যবস্থা। প্রথম পর্বে আমরা ভ্যাকসিনের বেসিক মেকানিজম সম্পর্কে জেনেছিলাম। কিভাবে সাব ইউনিট ভ্যাকসিন কাজ করে ওইটাও জেনেছিলাম। আজ আমরা ভ্যাকসিনের অন্যান্য প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। NCBI এর এক জার্নালের বরাত দিয়ে জানা যায়, মানব শরীরে আক্রমণ করতে পারে এইরূপ প্রায় ২১৯ প্রজাতির বাইরাস এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে। আবার প্রত্যেকটি প্রজাতির অধীনে রয়েছে হাজারো রকমের ভাইরাসের টাইপ। একবার এক বিজ্ঞানী কে প্রশ্ন করা হয়েছিল পৃথিবীতে কত প্রকারের ভাইরাস পারে উনি উত্তরে বলেছিলেন আমরা এখন পর্যন্ত ভাইরাস নামক সমুদ্রের সৈকতে পা দিয়েছি মাত্র। তাহলে একবার চিন্তা করুন আরো কত হাজার লক্ষ রকমের ভাইরাস এখনও অনাবিষ্কৃত থেকে গিয়েছে। নির্দিষ্ট ভাইরাসকে প্রতিহত করার জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। এই যেমন আপনি পোলিও ভ্যাকসিন দিয়ে চাইলে করোনাভাইরাস কে মারতে পারবেন না। বিভিন্ন পদ্ধতির ভ্যাকসিন তৈরির পেছনে, ভিন্ন ভাইরাসের ভিন্ন কার্যকলাপই মূলত দায়ী।

লাইভ অ্যাটিনিউটেড ভ্যাকসিন:
নাম শুনে মনে হতে পারে এটি অনেক জটিল কিছু। শুনে অবাক হবেন লাইভ অ্যাটিনিউটেড ভ্যাকসিন সিস্টেমটি হলো সরাসরি জীবন্ত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া। কি অবাক লাগছে না, যেখানে ভ্যাকসিনের উদ্দেশ্যে হলো জীবনকে মারার ওইখানে নাকি আবার জীবন্ত ভাইরাস শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই বিজ্ঞানীরা এখানে ছোট একটা চাল চালে ভ্যাক্সিনেশন টা করার আগে। এই ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতিতে প্রথমে জীবাণুর মূল কার্যপ্রণালিকে নষ্ট করে দেওয়া হয় সোজা কথায় বললে জীবাণুর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে একে দুর্বল করে দেওয়া হয়। এবং ইনিস্টিউট জীবাণু শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় যেটি শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারে না বরং শরীরকে ওই জীবাণুটির বিরুদ্ধে অভিযোজিত করে তোলে পরিপূরক এন্টিবডি তৈরি করার মাধ্যমে। প্রথম পর্বের উদাহরণ যার সাথে মিলিয়ে ধরুন, চোরের হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে কুকুরের সামনে নিয়ে আসলাম যাতে কুকুর চোর কে চিনে রাখতে পারে। আর ওই প্রকারের চোর যদি ভবিষ্যতে গ্রামে প্রবেশ করে পুকুর যেন প্রবেশের সাথে সাথেই সজাগ হয়ে যেতে পারে। এই পদ্ধতিটা অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত।

ইন্যাক্টিভ ভ্যাকসিন:
সোজা কথায় বললে ইন্যাক্টিভ ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতিটি হচ্ছে শরীরের ভেতরে সরাসরি মৃত ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দেওয়া এটির রোগ সৃষ্টিকারী কোন ক্ষমতায় থাকে না। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে ভাইরাসের কার্যক্ষমতা কে শূন্যে নিয়ে এসে অর্থাৎ মেরে ফেলে, মৃত ভাইরাসের দেহ গুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় যেন শরীর ওই মৃত ভাইরাসকে দেখে নিজের ভেতরে একটি স্মৃতি তৈরি করে রাখতে পারে ভবিষ্যতে অনাগত হামলা প্রতিহত করার জন্য।

inactive vaccination method

 
ডিএনএ এবং আরএনএ ভ্যাকসিন:
এই ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতিটিকে জেনেটিক ভ্যাকসিন বলা। এটি একটি নিউ জেনারেশন ভ্যাকসিন। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটির সাথে ডিএনএ অথবা আরএনএ এর সম্পর্ক রয়েছে। ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার ভেতরে জেনেটিক্যালি ডিএনএ থাকে অথবা আরএনএ থাকে। নিউক্লিক এসিড মূলত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার বংশগতির ধারক বাহক। একটি ভাইরাসের গঠন কার্যপ্রনালী কেমন হবে, কিভাবে এটি কাজ করবে সবকিছুই কোডিং করা তাকে ডিএনএ অথবা আরএনএ তে। এই ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতিটা কিছুটা জটিল অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায়। এইখানে ভাইরাস থেকে ডিএনএ অথবা আরএনএ যাই থাকুক না কেন ওই জেনেটিক মেটেরিয়াল কে প্রথমে আলাদা করে নেওয়া হয়। এরপর নিউক্লিক এসিডকে পুনরায় ডিজাইন করা হয় গবেষকের ইচ্ছা মত। বিজ্ঞানীরা এখানে ডিএনএর অথবা আরএনএ-এর ক্ষতিকারক কোড গুলোকে বাদ দিয়ে দেন। শুধু ওসব সিকোয়েন্স কে রাখেন যেগুলা থাকলে ভাইরাস কোন রোগ সৃষ্টি করতে পারবে না। এরপর ওই নতুন ডিজাইন করা নিকলী কেপিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক কপি তৈরি করে মানব শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই ডিএনএ অথবা আরএনএ আমাদের কোষের ভেতরে ট্রানস্ক্রিপশন অন্ড ট্রানসলেশন এর মাধ্যমে রোগ সৃষ্টিতে অক্ষম এমন হুবহু সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের কপি তৈরি করে। যেটি যেটি শরীরকে প্রশিক্ষিত করে , সত্তিকারের ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে। এই পদ্ধতিটি তুলনামূলক অনেক নিরাপদ, দ্রুত এবং কার্যকরী।
ডিএনএ আরএনএ ভ্যাকসিন

বর্তমানে ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতি, প্রযুক্তিগত সহায়তায় উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করছে আরো শক্তিশালী ভ্যাকসিন কিভাবে তৈরি করা যায়। কিছু কিছু গবেষণা কেন্দ্র ইউনিভার্সাল ভ্যাকসিন তৈরিতে হাত দিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে এটি এমন একটি ভ্যাকসিন হতে চলেছে যেটি দিয়ে অনেক অনেক প্রকার ভাইরাস কে প্রতিরোধ করা যাবে।

চলবে...

No comments

Powered by Blogger.